সীরাতে ঈসা আ: (পর্ব: - ০৩) হযরত ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামের জন্ম

অপরদিকে হযরত ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামের জন্মের অলৌকিকতা হলো, ইবলীস বলতে লাগলো, প্রত্যেক মহিলাই গর্ভবতী হয়েছে আমার সামনে এবং সন্তান প্রসব করেছে আমার হাতের তালুতে। কিন্তু এ সন্তানের ব্যাপারে আমি জানি না। গর্ভের সময়ও না এবং প্রসবের সময়ও না। (দুররে মানসূর, ৫:৪৩৬)

হযরত ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামের জন্ম


হযরত যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালাম মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বায়তুল মুকাদ্দাসের এক কোণে তার জন্য একটি কুঠুরি তৈরি করে দেন। সেখানে হযরত মারিয়াম ও হযরত যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালাম ব্যতীত অন্য কারো প্রবেশের অনুমতি ছিল না। মারিয়াম ‘আলাইহাস সালাম সেই কক্ষে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন।

এ সময়েই একদিন আল্লাহ প্রেরিত ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে এসে তাঁকে একজন পবিত্র সন্তানের সুসংবাদ প্রদান করেন। মারিয়াম ‘আলাইহাস সালাম এ কথা শুনে খুবই বিস্মিত হন। ফেরেশতা তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে অভয়বাণী শুনায়।

এরপর সেই ফেরেশতা আল্লাহর পক্ষ থেকে রুহ ফুঁকে দিলে তিনি গর্ভবতী হয়ে যান। প্রসবকাল যখন নিকটবর্তী হয়, দুর্নাম ও মিথ্যা অপবাদের ভয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং বায়তুল মুকাদ্দাস হতে প্রায় নয় মাইল দূরে সায়ির পর্বতের একটি টিলায় আশ্রয় নেন। 

হযরত মারিয়াম যখন গর্ভবতী হন, তখন তার বয়স কত ছিল, এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে, তখন তারা বয়স বারো বছর ছিল। কারো মতে, দশ বছর ছিল। আবার কারো মত হচ্ছে, তখন তার বয়স হয়েছিল বিশ বছর। (তাফসীরে কাবীর, ২১ খণ্ড, ১৮৪)

হযরত মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামের জীবনবৃত্তান্ত এই গ্রন্থে আলোচনা করা হয়েছে। এসব ঘটনা সংশ্লিষ্ট কুরআনের বিভিন্ন আয়াতও সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইমাম নাসায়ী রহ. বর্ণনা করেন, হযরত আনাস রা. থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত আছে, যে খেজুর গাছের নিচে মারিয়াম আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই জায়গাটির নাম ‘বায়তু লাহাম’। জনৈক রোমান বাদশা এই স্মৃতি রক্ষার জন্য এখানে একটি সৌধ নির্মাণ করেন। হাদীসটি ইমাম বায়হাকী রহ. উল্লেখ করেছেন এবং সহীহ বলে বর্ণনা করেছেন। (কাসাসুল আম্বিয়া, ৪৪৫ পৃষ্ঠা)  

সেখানেই মারিয়াম ‘আলাইহাস সালাম ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে প্রসব করেন। আল্লাহ তা‘আলা সেখানে মারিয়াম আলাইহাস সালামের জন্য একটি নহর জারী করে দেন এবং বিনা মৌসুমে তাজা খেজুরের ব্যবস্থা করে দেন।


‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামের ব্যাপারে শয়তানের ধোঁকা


একটি ইসরাঈলী রেওয়ায়েতে বর্ণনা অনুযায়ী, হযরত ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামের জন্মের পর সমস্ত মূর্তি তার দিকে সিজদাবনত হয়। এ অবস্থা দেখে ইবলীস ঘাবড়ে যায়। সে নানান দিকে খোঁজাখুঁজি করে কোন কিছু দেখতে পেল না- পূর্ব দিকেও না, পশ্চিম দিকেও না। তখন সে ব্যর্থ মনে ঘুরছিল। এমন সময় হঠাৎ দেখতে পেল, একটি খেজুর গাছের নিচে একজন মহিলা একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে বসে আছেন। আর ফেরেশতাগণ তাদের বেষ্টন করে রেখেছেন এবং বলাবলি করছেন, একজন নবী পিতা ছাড়া জন্মলাভ করেছেন। এ কথা শুনে ইবলীস ঘাবড়ে গেল এবং মনে মনে বললো, নিশ্চয় এখানেই সেই ঘটনা ঘটেছে। অতঃপর ইবলীস কসম খেয়ে বললো, এর দ্বারা আমি অনেককে বিভ্রান্ত করবো। সেমতে পরবর্তীকালে ইবলীস ইহুদীদের গোমরাহ করেছে। ইহুদীরা ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে ‘নাউযুবিল্লাহ’ জারজ সন্তান বলে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করেছে। আর খ্রিস্টানদের ভ্রষ্ট করেছে এভাবে যে, তারা বলেছে, ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালাম আল্লাহর পুত্র।

অপরদিকে হযরত ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামের জন্মের অলৌকিকতা হলো, ইবলীস বলতে লাগলো, প্রত্যেক মহিলাই গর্ভবতী হয়েছে আমার সামনে এবং সন্তান প্রসব করেছে আমার হাতের তালুতে। কিন্তু এ সন্তানের ব্যাপারে আমি জানি না। গর্ভের সময়ও না এবং প্রসবের সময়ও না। (দুররে মানসূর, ৫:৪৩৬)

হযরত ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামের জন্মের পর ইবলীস তার ব্যাপারে অপপ্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তি ছাড়ানোর জন্য মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামের গর্ভে তার পিতা ছাড়া জন্ম লাভের সংবাদ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিলো। এ সংবাদ শুনে বনী ইসরাইল সম্প্রদায় মারিয়ামকে খোঁজা আরম্ভ করলো। তারা তাকে খুঁজতে বায়তুল মুকাদ্দাসে গেলো। সেখানে তারা তার ব্যাপারে ইউসুফ নাজ্জারকে জিজ্ঞাসা করলো, যিনি মারিয়ামের সাথে বায়তুল মুকাদ্দাসের খেদমত করতেন। তিনি উত্তর দিলেন, আমি জানি না। তবে তার কক্ষের চাবি হযরত যাকারিয়ার কাছে আছে। তারা যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালাম থেকে চাবি এনে দরজা খুললো এবং তাকে কক্ষে তালাশ করলো। সেখানে যখন তাকে পেলো না, তখন তারা ইউসুফকে অপবাদ দিল। এমন সময় এক ব্যক্তি বললো, আমি তাকে অমুক জায়গায় দেখেছি। এ কথা শুনে তারা সেদিকে এগিয়ে গেল। (দুররে মানসূর, ৫:৪৩৭) 

অন্য এক বর্ণনায় আছে, মারিয়াম ‘আলাইহাস সালাম কিছুটা সুস্থতা অনুভব করলেন এবং সন্তান কোলে নিয়ে বসলেন। এ দিকে তার সম্প্রদায় তার খোঁজে বের হয়ে একজন রাখালকে জিজ্ঞাসা করলো, তুমি কি অমুককে দেখেছো? রাখাল বললো, না। তবে আমি একদিন রাত্রে আমার গরুর মধ্যে এমন একটি বিষয় দেখেছি, যা পূর্বে কখনো দেখেনি। আমি দেখেছি, গরুটি এই উপত্যকার দিকে সিজদা করছে। তখন তারা সেদিকে এগিয়ে গেল। (দুররে মানসূর, ৫:৪৩৯)

সে সময় মারিয়াম ‘আলাইহাস সালাম চল্লিশ দিন পর নিফাস থেকে পবিত্র হলেন এবং সন্তানকে কোলে নিয়ে বের হয়ে এলেন। পথিমধ্যে সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে তার দেখা হলো। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَاَتَتْ بِهٖ قَوْمَهَا تَحْمِلُهٗ

অতঃপর মারিয়াম সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলেন। (সূরা মারিয়াম, আয়াত ২৭)  

সম্প্রদায়ের লোকেরা মারিয়ামের কোলে বাচ্চা দেখে বিস্ময়ভরা বদনে এগিয়ে এলো এবং তাকে এ ব্যাপারে অপবাদ দিয়ে ভর্ৎসনা করতে লাগলো। এভাবে তারা হযরত মারিয়ামের প্রতি অপবাদ আরোপ করলেন। তারা মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামের পবিত্র ও নিষ্কলুষ চরিত্রকে কলুষিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগলো।

About the Author

ছোট বেলা থেকেই টেকনোলজির নিজের ভিতর অন্যরকম একটা টান অনুভব করি। যদিও কওমি মাদরাসার চার দেয়ালের ভিতরেই ছিল বসবাস। তারপরও অধম্য আগ্রহের কারনে যতটুকু শিখেছি ততটুকু ছড়িয়ে দিতে চাই সকলের মাঝে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
দয়া করে এড ব্লকার বন্ধ করুন
আমাদের সাইটটি পরিচালনা করতে বিজ্ঞাপনগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই বিজ্ঞাপনগুলি আমাদের সাইটটি বিনামূল্যে রাখতে সহায়তা করে এবং আমাদের আরও উন্নত কনটেন্ট সরবরাহ করতে সহায়তা করে। দয়া করে এড ব্লকার নিষ্ক্রিয় করুন এবং আমাদের সাইটটি উপভোগ করুন। আপনার সহযোগিতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
Sharif Multimedia হোয়াটসঅ্যাপ এ আপনাকে স্বাগতম
আসসালামু আলাইকুম!
আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারি?
Type here...