রাসূল সা. এর জীবনি (পর্ব - ১৪) আবু সুফিয়ানের ইসলাম গ্রহণ

মুসলিম সেনাবাহিনীর শক্তিমত্তা পর্যবেক্ষণ করে আবু সুফিয়ান মক্কায় চলে গেলেন। এবং চিৎকার করে করে মক্কাবাসীকে সতর্ক করতে লাগলেন, পাশাপাশি নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা দানের ঘোষণাও করতে লাগলেন। (তহাবী শরীফ, হা. নং ৫০৫৪)

আবু সুফিয়ানের ইসলাম গ্রহণ

সকাল বেলা যখন আব্বাস রা. আবু সুফিয়ানকে নবীজীর দরবারে উপস্থিত করলেন, তখন নবীজী তাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে বললেন,
وَيْحَكَ يَا ابَا سُفْيَانَ , الَمْ يَانِ لَكَ انْ تَشْهَدَ انْ لَا الَهَ الَّا اللهُ؟
“হে আবু সুফিয়ান! এখনও কি তোমার এ কথার সাক্ষ্য দেওয়ার সময় আসেনি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই?”আবু সুফিয়ান ইসলামের ব্যাপারে তাঁর অন্তরের সন্দিহান অবস্থার কথা বলে সাক্ষ্য প্রদানে বিরত থাকলো। নবীজী আবার তাকে দাওয়াত দিলেন,
وَيْلَكَ يَا ابَا سُفْيَانَ الَمْ يَانِ لَكَ انْ تَشْهَدَ انِّي رَسُولُ اللهِ
“হে আবু সুফিয়ান! এখনও কি এ কথার সাক্ষ্য দেওয়ার সময় আসেনি যে, নিশ্চয় আমি আল্লাহর রাসূল!”আবু সুফিয়ান এবারও দোদুল্যমানতা প্রকাশ করলো। হযরত আব্বাস রা. তাকে বললেন, “আবু সুফিয়ান! তোমার ধ্বংস হোক! ইসলাম গ্রহণ করো! এবং তোমার গর্দান উড়ে যাওয়ার আগেই এ কথার সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।”এরপর আবু সুফিয়ান তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিল। আবু সুফিয়ান যখন নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখন আব্বাস রা. নিবেদন করলেন,
يَا رَسُولَ اللهِ، انَّ ابَا سُفْيَانَ رَجُلٌ يُحِبُّ هَذَا الْفَخْرَ، فَاجْعَلْ لَهُ شَيْئًا،
“হে আল্লাহর রাসূল! আবু সুফিয়ান একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। তার ব্যক্তিত্ব সম্মান ও গৌরবময় বিষয় পছন্দ করে। কাজেই (মক্কা প্রবেশকালে) আপনি তাকে গৌরবময় কোনো বিষয়ের অধিকার দান করুন।”নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«نَعَمْ، مَنْ دَخَلَ دَارَ ابِي سُفْيَانَ فَهُوَ امِنٌ، وَمَنْ اغْلَقَ عَلَيْهِ دَارَهُ فَهُوَ امِنٌ، وَمَنْ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَهُوَامِنٌ»
হ্যাঁ, (আজকের দিনে মক্কাবাসীদের মধ্য হতে) যে আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ। যে নিজ ঘরে দরজা বন্ধ করে আশ্রয় নিবে সেও নিরাপদ। আর যে মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে, সেও আজ নিরাপদ থাকবে। (হাদীস নং ৩০২২)

আবু সুফিয়ানের মুসলিম বাহিনী পর্যবেক্ষণ

আবু সুফিয়ানকে মক্কায় প্রেরণের পূর্বে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাইলেন তাকে মুসলিম সেনাবাহিনীর শৌর্যবীর্যের ঝলক দেখাতে!আব্বাস রা. তাকে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গেলেন। বীরত্ব ও সাহসিকতার দ্যূতি ছড়িয়ে সাহাবায়েকেরামের জামা‘আত ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে পথ অতিক্রম করতে লাগলো, আর আবু সুফিয়ান তা দেখতে লাগলেন। এক পর্যায়ে আনসারী সাহাবাদের একটি বড় জামা‘আত নিয়ে হযরত সা‘দ বিন উবাদাহ রা. এগিয়ে এলেন। যার হাতে মুসলিম সেনাবাহিনীর ঝান্ডা ছিলো। আবু সুফিয়ানকে দেখে (কাফেরদের জুলুম নির্যাতনের ব্যাপারে আবু সুফিয়ানের অগ্রণী ভূমিকার কথা মনে পড়ে যাওয়ায়) সা‘দ বিন উবাদা রা. বলে উঠলেন,
يَا ابَا سُفْيَانَ، اليَوْمَ يَوْمُ المَلْحَمَةِ، اليَوْمَ تُسْتَحَلُّ الكَعْبَةُ،
“হে আবু সুফিয়ান! আজ তো ‘হত্যার’ দিন, আজ কাবার মধ্যে হত্যাযজ্ঞের বৈধতা দেয়া হবে।” (বুখারী শরীফ, হা. নং ৪২৮০)

বিনয় ও নম্রতার আরো একটি দৃষ্টান্ত!

কিছুক্ষণ পর নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন। বিনয়বশতঃ নবীজী ছিলেন সাহাবাদের একটি ক্ষুদ্র কাফেলার সাথে!আবু সুফিয়ান যেহেতু হযরত সা‘দ বিন উবাদার কথায় আতংকিত হয়ে গিয়েছিলেন, কাজেই নবীজীকে দেখেই সে সা‘দ বিন উবাদার কথা অভিযোগের সূরে জানালো। নবীজী তা শুনে বললেন,
«كَذَبَ سَعْدٌ، وَلَكِنْ هَذَا يَوْمٌ يُعَظِّمُ اللهُ فِيهِ الكَعْبَةَ، وَيَوْمٌ تُكْسَى فِيهِ الكَعْبَةُ»
সা‘দ ভুল বলেছে, আজ তো কাবাকে সম্মানিত করা হবে! আজ কাবাকে গিলাফ দ্বারা সুসজ্জিত করা হবে!!আবু সুফিয়ানকে লক্ষ্য করে সা‘দ বিন উবাদা রা. এর বক্তব্য যেহেতু বাহ্য দৃষ্টিতে শোভনীয় ছিল না, কাজেই নবীজী তার হাত থেকে ঝান্ডা নিয়ে নিলেন, তবে তিনি যেন কষ্ট না পান সে দিকে লক্ষ্য রেখে ঝান্ডা তার পুত্র ‘কায়স’ কে দিয়ে দিলেন। এরপর স্বয়ং হযরত সা‘দ এর অনুরোধে নবীজী সে ঝান্ডা কায়স থেকে নিয়ে হযরত যুবায়ের রা. কে ধারণ করতে দিলেন। (মুসনাদে বাযযার, ৭৩১৬; ফাতহুল বারী, ৭:৬৪৫) 

আবু সুফিয়ানের সতর্কীকরণ

মুসলিম সেনাবাহিনীর শক্তিমত্তা পর্যবেক্ষণ করে আবু সুফিয়ান মক্কায় চলে গেলেন। এবং চিৎকার করে করে মক্কাবাসীকে সতর্ক করতে লাগলেন, পাশাপাশি নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা দানের ঘোষণাও করতে লাগলেন। (তহাবী শরীফ, হা. নং ৫০৫৪)

About the Author

ছোট বেলা থেকেই টেকনোলজির নিজের ভিতর অন্যরকম একটা টান অনুভব করি। যদিও কওমি মাদরাসার চার দেয়ালের ভিতরেই ছিল বসবাস। তারপরও অধম্য আগ্রহের কারনে যতটুকু শিখেছি ততটুকু ছড়িয়ে দিতে চাই সকলের মাঝে।

إرسال تعليق

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
দয়া করে এড ব্লকার বন্ধ করুন
আমাদের সাইটটি পরিচালনা করতে বিজ্ঞাপনগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই বিজ্ঞাপনগুলি আমাদের সাইটটি বিনামূল্যে রাখতে সহায়তা করে এবং আমাদের আরও উন্নত কনটেন্ট সরবরাহ করতে সহায়তা করে। দয়া করে এড ব্লকার নিষ্ক্রিয় করুন এবং আমাদের সাইটটি উপভোগ করুন। আপনার সহযোগিতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
Sharif Multimedia হোয়াটসঅ্যাপ এ আপনাকে স্বাগতম
আসসালামু আলাইকুম!
আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারি?
Type here...