সীরাতে যাকারিয়া আ. (পর্ব - ০২) ইয়াহইয়া ও ঈসা আ. এর পারস্পরিক সম্পর্ক

ইয়াহইয়া ‘আলাইহিস সালাম ও ঈসা ‘আলাইহিস সালাম এর পারস্পরিক সম্পর্ক



হযরত যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের সাথে হযরত মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামের আত্মীয়তার সম্পর্কের এ সূত্র ধরেই মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামের ছেলে ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালাম ও যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের ছেলে ইয়াহইয়া ‘আলাইহিস সালামকে হাদীস শরীফে পরস্পর খালাতো ভাই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, হযরত মালেক বিন আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে রাতে ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ করানো হয়েছিল, সে রাত সম্বন্ধে তিনি সাহাবীদের নিকট বিস্তারিত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, জিবরাইল ‘আলাইহিস সালাম আমাকে নিয়ে উপরে আরোহণ করলেন এবং দ্বিতীয় আকাশে পৌঁছে জিবরাইল ‘আলাইহিস সালাম দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, কে? বললেন, জিবরাইল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মদ। আবার জিজ্ঞেস করা হল, তাকে কি আহ্বান করা হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। এসব সওয়াল-জবাব শেষ হওয়ার পর দরজা খুলে দেওয়া হলো। নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সেখানে ইয়াহইয়া এবং ‘ঈসা আলাইহিমাস সালামকে দেখতে পান। তাঁরা পরস্পর খালাতো ভাই। জিবরাইল ‘আলাইহিস সালাম বললেন, এঁরা হলেন ইয়াহইয়া ও ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালাম। তাদের সালাম দিন। আমি সালাম দিলাম। তারা সালামের উত্তর দিলেন। অতঃপর বললেন, ধন্যবাদ হিতৈশী ভ্রাতা ও যোগ্যতম নবীকে। 


(বুখারী শরীফ, ২:১৬১, হাদীস: ৩৪৩০।   باب قول الله تعالى ذكر رحمة ربك عبده  زكريا)



কুরআনে যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের আলোচনা


আল্লাহ তা‘আলা সূরা মারিয়ামে হযরত যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের আলোচনা প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন, 


ذِكْرُ رَحْمَتِ رَبِّکَ عَبْدَهٗ زَکَرِیَّا ○ اِذْ نَادٰی رَبَّهٗ نِدَآءً خَفِیًّا ○ قَالَ رَبِّ اِنِّیْ وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّیْ وَ اشْتَعَلَ الرَّاْسُ شَیْبًا وَّ لَمْ اَكُنْۢ بِدُعَآئِکَ رَبِّ شَقِیًّا ○ وَ اِنِّیْ خِفْتُ الْمَوَالِیَ مِنْ وَّ رَآءِیْ وَکَانَتِ امْرَاَتِیْ عَاقِرًا فَهَبْ لِیْ مِنْ لَّدُنْکَ وَلِیًّا ○ یَّرِثُنِیْ وَیَرِثُ مِنْ اٰلِ یَعْقُوْبَ ۖ وَ اجْعَلْهُ رَبِّ رَضِیًّا ○ یٰزَکَرِیَّاۤ اِنَّا نُبَشِّرُکَ بِغُلٰمِۣ اسْمُهٗ یَحْیٰی ۙ لَمْ نَجْعَلْ لَّهٗ مِنْ قَبْلُ سَمِیًّا ○ قَالَ رَبِّ اَنّٰی یَكُوْنُ لِیْ غُلٰمٌ وَّکَانَتِ امْرَاَتِیْ عَاقِرًا وَّ قَدْ بَلَغْتُ مِنَ الْکِبَرِ عِتِیًّا ○ قَالَ کَذٰلِکَ ۚ قَالَ رَبُّکَ هُوَ عَلَیَّ هَیِّنٌ وَّ قَدْ خَلَقْتُکَ مِنْ قَبْلُ وَلَمْ تَكُ شَیْئًا ○ قَالَ رَبِّ اجْعَلْ لِّیْۤ  اٰیَۃً ؕ قَالَ اٰیَتُکَ اَلَّا تُکَلِّمَ النَّاسَ ثَلٰثَ لَیَالٍ سَوِیًّا ○ فَخَرَجَ عَلٰی قَوْمِهٖ مِنَ الْمِحْرَابِ فَاَوْحٰۤی اِلَیْهِمْ اَنْ سَبِّحُوْا بُكْرَۃً وَّ عَشِیًّا○


এটা আপনার প্রতিপালক কর্তৃক তার বান্দা যাকারিয়ার ‘আলাইহিস সালামের প্রতি অনুগ্রহের বিবরণ। যখন তিনি তার প্রতিপালকের নিকট দু‘আ করেছিলেন নিভৃতে; তিনি বলেছিলেন, হে আমার রব, আমার অস্থি দুর্বল হয়ে গেছে। বার্ধক্যে আমার মস্তক শুভ্রোজ্জ্বল হয়ে গেছে। হে আমার প্রতিপালক, আপনার নিকট দু‘আ করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি। আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্বন্ধে আমি আশঙ্কা করছি। আর আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং আপনি নিজের পক্ষ হতে আমাকে দান করুন উত্তরাধিকারী, যে আমার উত্তরাধিকারিত্ব করবে এবং উত্তরাধিকারিত্ব করবে ইয়াকুবের বংশের। আর হে আমার প্রতিপালক, তাকে করুন সন্তোষভাজন। 


(আল্লাহ তা‘আলা বললেন,) হে যাকারিয়া, আমি আপনাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি, যার নাম হবে ‘ইয়াহইয়া’। এই নামে পূর্বে আমি কারো নামকরণ করিনি। তিনি বললেন, হে আমার প্রতিপালক, আমার পুত্র হবে কেমন করে, যখন আমার স্ত্রী বন্ধ্যা এবং আমি বার্ধক্যের শেষ সীমায় উপনীত? তিনি বললেন, এভাবেই হবে। আপনার প্রতিপালক বলছেন, এটা আমার জন্য সহজ। আমি তো ইতোপূর্বে আপনাকে সৃষ্টি করেছি যখন আপনি কিছুই ছিলেন না। যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালাম বললেন, হে আমার প্রতিপালক, আমাকে একটি নিদর্শন দিন। তিনি বললেন, আপনার নিদর্শন হল আপনি (সুস্থ থাকা সত্ত্বেও) তিনদিন কারো সাথে বাক্যালাপ করতে সক্ষম হবেন না। 


অতঃপর তিনি কক্ষ হতে বের হয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট এলেন এবং ইঙ্গিতে তাদের সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে বললেন।  (সূরা মারয়াম, আয়াত: ২-১১)


হযরত যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালাম সন্তান লাভের আশায় নিজের বার্ধক্য ও বাহ্যিক-অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা প্রকাশ করে আল্লাহর কাছে সন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা করেন। অতঃপর বলেন, আপনার কাছে আমি যতবারই প্রার্থনা করেছি, সব প্রার্থনাই আপনি কবুল করেছেন। আপনার কাছে আমি যা চেয়েছি, সে ব্যাপারে আমাকে নিরাশ করেননি।


সন্তান কামনায় যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের দু‘আর আরেকটি বিবরণ সূরা আল ইমরানেও বিবৃত হয়েছে। উক্ত দু‘আয় তিনি বলেন,


رَبِّ هَبْ لِیْ مِنْ لَّدُنْکَ ذُرِّیَّۃً طَیِّبَۃً ۚ اِنَّکَ سَمِیْعُ الدُّعَآءِ


‘হে আমার প্রতিপালক, আপনার পক্ষ থেকে আমাকে সুসন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।’ (সূরা আল- ইমরান, আয়াত: ৩৮)


যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালাম এই প্রার্থনা নির্জনে করতেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,


اِذْ نَادٰى رَبَّه نِدَآءً خَفِيًّا


যখন তিনি তার রব-পরওয়ারদিগারকে ডাকলেন চুপিসারে। (সূরা মারয়াম, আয়াত: ৩)


নির্জনে এই প্রার্থনা করার কারণ সম্পর্কে কোন কোন মুফাসসির বলেন, তিনি সংগোপনে এই প্রার্থনা করতেন, যাতে করে বৃদ্ধ বয়সে সন্তান লাভের আকাঙ্ক্ষাকে কেউ নির্বুদ্ধিতা বলে আখ্যা না দেয়। কেউ কেউ বলেন, নির্জনে প্রার্থনা করার কারণ হলো, নির্জনে প্রার্থনা আল্লাহ তা‘আলা বেশি পছন্দ করেন। যেমন, উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত কাতাদা রহ. বলেন, আল্লাহ তা‘আলা হৃদয়ের কথা জানেন এবং সুপ্ত ধ্বনি শোনতে পান।


আল্লাহ তা‘আলা যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের প্রার্থনা কবুল করলেন এবং ফেরেশতাগণের মাধ্যমে সন্তান লাভের সুসংবাদ পাঠালেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালাম যখন আপন কক্ষে নামাযে দণ্ডায়মান ছিলেন, তখন ফেরেশতাগণ তাঁকে সম্বোধন করে বললেন, আল্লাহ আপনাকে ইয়াহইয়া-এর জন্মের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যিনি হবেন আল্লাহর প্রেরিত কালেমার সত্যায়নকারী, সরদার, সংযমশীল ও পুণ্যবান নবী। তখন যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালাম সবিস্ময়ে বললেন, হে আমার প্রতিপালক, আমার পুত্র হবে কীভাবে, আমার তো বার্ধক্য এসে গেছে এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা! আল্লাহ তা‘আলা বললেন, এভাবেই আল্লাহ করেন, যা তার ইচ্ছা হয়। তিনি বললেন, হে আমার প্রতিপালক, আমাকে একটি নিদর্শন দান করুন। আল্লাহ বললেন, আপনার নিদর্শন হল, তিনদিন আপনি ইঙ্গিত ছাড়া মানুষের সাথে কথা বলতে পারবেন না। (অর্থাৎ ঐ তিনদিন শুধু ইশারা-ইঙ্গিতে কথা বলবেন, মুখে কথা বলতে সক্ষম হবেন না।) আর আপনার প্রতিপালককে অধিকহারে স্মরণ করুন এবং সকাল-সন্ধ্যা তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন।’  (সূরা আল- ইমরান, আয়াত: ৩৯-৪১)

About the Author

ছোট বেলা থেকেই টেকনোলজির নিজের ভিতর অন্যরকম একটা টান অনুভব করি। যদিও কওমি মাদরাসার চার দেয়ালের ভিতরেই ছিল বসবাস। তারপরও অধম্য আগ্রহের কারনে যতটুকু শিখেছি ততটুকু ছড়িয়ে দিতে চাই সকলের মাঝে।

إرسال تعليق

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
দয়া করে এড ব্লকার বন্ধ করুন
আমাদের সাইটটি পরিচালনা করতে বিজ্ঞাপনগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই বিজ্ঞাপনগুলি আমাদের সাইটটি বিনামূল্যে রাখতে সহায়তা করে এবং আমাদের আরও উন্নত কনটেন্ট সরবরাহ করতে সহায়তা করে। দয়া করে এড ব্লকার নিষ্ক্রিয় করুন এবং আমাদের সাইটটি উপভোগ করুন। আপনার সহযোগিতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
Sharif Multimedia হোয়াটসঅ্যাপ এ আপনাকে স্বাগতম
আসসালামু আলাইকুম!
আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারি?
Type here...